World History
Public | 31-May-2025

প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যের এক অতুলনীয় কীর্তি কৈলাস মন্দির!

কৈলাস মন্দির প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যের এক অতুলনীয় কীর্তি। ভারতের মন্দিরগুলো যুগে যুগে ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করেছে তাদের ইতিহাস আর অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য। এসব মন্দিরের মধ্যেও এক বিস্ময় কৈলাস মন্দির। মহারাষ্ট্রের এলোরার সহ্যাদ্রি পাহাড়ের খাড়া ব্যাসল্ট পাথরের গায়ে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে এই মন্দির, যা বিশ্বের বৃহত্তম একখণ্ড পাথরের মন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩০০ ফুট লম্বা ও ১৭৫ ফুট চওড়া এই মন্দির ১০০ ফুট উঁচু একটি পর্বতপ্রান্ত থেকে কাটা হয়েছে। কিন্তু এই স্থাপনার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো এর নির্মাণপদ্ধতি। অন্য সব মন্দির যেখানে নিচ থেকে ওপরে গড়ে তোলা হয়, সেখানে কৈলাস মন্দির তৈরি হয়েছিল উল্টোভাবে- উপর থেকে নিচে। সাধারণ হাতুড়ি ও ছেনির মতো সরঞ্জাম দিয়েই এই অসাধারণ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন সেই সময়কার কারিগররা। ভাবা যায়, কোনো ধাতব কাঠামো বা স্ক্যাফোল্ড ছাড়াই তারা গড়ে তুলেছিলেন এই নির্মাণের বিস্ময়! মধ্যযুগীয় নানা গ্রন্থে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে ‘মানিকেশ্বর গুহামন্দির’ নামে। লোককথা বলে, এলাপুর (বর্তমানে অমরাবতীর এলিচপুর) নামক রাজ্যের রাজা এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। রাণী মানিকবতী তখন রাজাকে নিয়ে এলেন মহীসামালায় (এখনকার মহাইসমল), যেখানে গৃহেশ্বর শিবলিঙ্গে পূজা করে একটি মানত করেন- যদি রাজা সুস্থ হন, তবে তিনি শিবের নামে একটি মন্দির গড়বেন। অবিশ্বাস্যভাবে, রাজা সেই পূর্ণতীর্থের জলে স্নান করেই আরোগ্য লাভ করেন। রাণী তখন উপবাস শুরু করেন এবং বলেন, যতক্ষণ না তিনি মন্দিরের শিখর দেখবেন, ততক্ষণ কিছু খাবেন না। কিন্তু এত দ্রুত মন্দির নির্মাণে কেউ সাহস দেখাতে পারল না। সেই সময় এগিয়ে এলেন কৈলাস মন্দিরের স্থপতি কোকাসা, যিনি প্রতিজ্ঞা করলেন এক সপ্তাহের মধ্যেই রাণী মন্দিরের শিখর দেখতে পাবেন। তিনি মন্দির খোদাই শুরু করেন উপর থেকে, প্রথমেই শিখরের দিকে মনোযোগ দিয়ে। মন্দির নির্মাণ শেষে রাজা নতুন শহরের নাম দেন এলাপুর, যা আজকের এলোরা। ৮ম শতকে রাষ্টকূট বংশের রাজত্বকালে নির্মিত এই কৈলাস মন্দির, হিমালয়ের কৈলাস পর্বতের প্রতিরূপ- শিবের আবাসস্থল। এই মন্দিরের ভিতর আছে মণ্ডপ, স্তম্ভ, করিডোর, পূজার কক্ষ, সুবিশাল নন্দিমণ্ডপ এবং প্রবেশপথে দুটি বিশাল পাথরের হাতি। মন্দিরের দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতের দৃশ্যসহ হিন্দু পুরাণের নানা গল্প। এই মন্দির কেবল এক স্থাপত্য-বিস্ময় নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতীকও। প্রবেশদ্বার ‘গোপুরম’ প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় পার্থিব জগত থেকে পবিত্র জগতে প্রবেশের। মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে যতই ভেতরে যাওয়া যায়। আলো কমে আসে, স্থান সংকীর্ণ হয়। যেন মন ধীরে ধীরে স্থির হয়ে ঈশ্বরের আরও কাছে পৌঁছাতে পারে।
Follow Us Google News
View (3,448) | Like (0) | Comments (0)
Like Comment
Comment Box
Sponsor

For Ads

+01828-684595

www.fewlook.com

Fewlook is a world wide social media platform

Install FewLook Android Application

PlayStore Free Download Available

Install Now